নিজস্ব প্রতিবেদক: একটি ছোট্ট শিশু, হয়তো তার বয়স পাঁচ কিংবা ছয়। পিঠে ব্যাগ নেই, কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নয়—বরং অতীতের দগদগে ক্ষত আর ভয়ভীতির এক অদৃশ্য ভার সে বয়ে বেড়ায়। তার চারপাশে শীতল বাতাস, অচেনা ভাষা, আর অজানা ভবিষ্যতের হাতছানি। সে দাঁড়িয়ে আছে জার্মানির সীমান্তে—নিরাপত্তার খোঁজে, নতুন জীবনের আশায়।
কিন্তু এবার, সেই সীমান্তে অপেক্ষা করছে এক কঠোর বাস্তবতা—“ফিরে যাও।”
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে জার্মানিতে আশ্রয় চাওয়া মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, এটি সিস্টেমের সফলতা। কিন্তু মানবতার প্রশ্ন তো সংখ্যায় মাপা যায় না।
আমরা কি ভেবেছি, সেই মানুষগুলো কোথায় গেল? সেই আফগান মা, যে সন্তানদের নিয়ে মরুভূমি পেরিয়ে এসেছিলেন? সেই সিরীয় যুবক, যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পেরিয়েছিলেন? এখন তারা কোথায়? সীমান্তের গেটের বাইরে? না-কি, জীবনের দোরগোড়ারও বাইরে?
বলা হচ্ছে, সীমান্তে “৭২ ধারা” প্রয়োগে তারা ফেরত পাঠানো হচ্ছে। হ্যাঁ, আইন আছে, নিয়ম আছে—কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেই আইন কি হৃদয়ের ভাষা বোঝে?
আদালত বলছে, এটি বেআইনি
আদালত বলেছে, এটি ইউরোপীয় নীতির পরিপন্থী। তবুও সরকার বলছে, “আমরা যুক্তি দেখাব।” যুক্তির এই যুদ্ধে, মানুষ হেরে যাচ্ছে।
অথচ ইউরোপ একদিন যুদ্ধপীড়িতদের জন্য আশার বাতিঘর ছিল। জার্মানি ছিল সেই দরজা, যেখান দিয়ে হাজার হাজার মানুষ জীবনের নতুন সূর্য দেখেছে। আজ সেই দরজা কি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে?
সংখ্যা কমেছে, দায় কার?
কেউ বলছে, বলকান রাষ্ট্রগুলো অভিবাসন রুখেছে। কেউ বলছে, সিরিয়ায় আসাদের পতনে লোকজন ফিরে যাচ্ছে।
কিন্তু এমনও তো হতে পারে, মানুষ এখন আর সাহস করছে না।
কারণ, সাহস হারানোর নামই তো যুদ্ধের সবচেয়ে নির্মম পরিণতি।
ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সরকার বলছে, তারা প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে
কিন্তু প্রতিশ্রুতি কি কেবল নিরাপত্তার? না-কি তা মানবতারও?
আমরা কি পারি না—নিরাপত্তার বেষ্টনীর ভেতর একটু জায়গা রাখতে কিছু মানুষের জন্য, যাদের ‘ভবিষ্যৎ’ নামের শব্দটা এখনো খুব দূরের?
আমরা যখন কোনো মানুষের মুখে “আশ্রয় চাই” কথাটা শুনি, তখন আমাদের চোখ কি কেবল পাসপোর্ট খোঁজে, না-কি হৃদয়ও খোঁজে তার ইতিহাস?
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika